ব্যর্থতায় পর্যবসিত আলজেরিয়ার উচ্চাভিলাষী গাড়ি শিল্প
DhakaReport24.com || 2021-02-15 21:14:00
সংযোজন কারখানা বন্ধ, জেলবন্দি কারকানার প্রধানরা এবং কর্মী ছাঁটাইয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে আলজেরিয়ার গাড়ি শিল্প। উত্তর আফ্রিকার দেশটির ফ্ল্যাগশিপ গাড়ি তৈরির একসময়ের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। দেশটির সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিরতাও বিদেশী যৌথ উদ্যোগের কারখানাগুলোকে বন্ধ করে দিয়েছে এবং ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট আবদেলাজিজ বুতেফ্লিকার স্বজনপ্রীতি শিল্পটিকে পঙ্গু করে দিয়েছে। হাজার হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টির আলজেরিয়ার স্বপ্ন ভেঙে গেছে এবং নতুন যানবাহন দেশটিতে অত্যাবশ্যকীয় হয়ে উঠেছে। খবর এএফপি।
এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে গাড়ি শিল্পকে দাঁড় করাতে উদ্যোগ নিচ্ছে দেশটি। গত মাসে শিল্পমন্ত্রী ফেরহাত-আইত আলী প্রতিশ্রতি দিয়েছিলেন, অতীতের রীতিগুলো ভেঙে দৃঢ় ভিত্তিতে গাড়ি শিল্প পুনর্জাগরণের জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
ফরাসি নির্মাতা রেনল্ট আলজিয়ার্সের সঙ্গে সরকারের অংশীদারিত্ব চুক্তির মাধ্যমে ২০১২ সালে আলজেরিয়ার গাড়ি শিল্পের যাত্রা হয়েছিল। দুই বছর পর দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ওরানে প্রথম কারখানা তৈরি করতে এ চুক্তি হয়েছিল। এরপর অন্যান্য গাড়ি নির্মাতা সংস্থাও একই পথ অনুসরণ করেছিল। উত্তর কোরিয়ার হুন্দাই ২০১৬ সালে তিয়েরেটে সংযোজন কারখানা চালু করেছিল। পরের বছর জার্মানির ভক্সওয়াগনও দেশটির গাড়ি উৎপাদন শুরু করেছিল।
উত্তর আফ্রিকার দেশটি আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে আনা, আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী মরক্কোর সঙ্গে এ খাতে প্রতিযোগিতা করা এবং রফতানি আয়ের ৯০ শতাংশের জোগান দেয়া তেলের আয় কমিয়ে দেয়ার মাধ্যমে অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে চেয়েছিল।
তবে আলজেরিয়ায় শিল্পটি ২০১৭ সালের শুরুর দিক থেকে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। সে সময় কর্তৃপক্ষ ‘ছদ্মবেশী আমদানি’ সেমি নকড-ডাউন (এসকেডি) ইউনিট নিয়ে বিদেশী গাড়ি প্রস্তুতকারকদের নিন্দা শুরু করে। এসকেডি ইউনিটগুলো যন্ত্রপাতি খুলে আমদানি করা হয় এবং আমদানির পর পুনরায় সংযোজন করা হয়। আর এজন্য ন্যূনতম কিছু শ্রমিকের প্রয়োজন পড়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলোতে এ বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে সরকার হুন্দাইয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত করেছিল।
২০১৭ সালের জুলাইয়ে বিস্তৃত কেলেঙ্কারি সম্পর্কিত দুর্নীতির অভিযোগে বর্তমানে কারাগারে থাকা সাবেক শিল্পমন্ত্রী মাহজজব বেদদা সব নতুন গাড়ি সংযোজন প্রকল্প স্থগিত করেছিলেন। ২০১৯ সালের এপ্রিলে গণবিক্ষোভের মুখে বুতেফ্লিকাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর বেশ কয়েকটি সংযোজন কারখানার প্রধান দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন।
তার উত্তরসূরি প্রেসিডেন্ট আবদেল মাদজিদ তেবউন ওই বছরের ডিসেম্বরে ক্ষমতা গ্রহণের পর দ্রুততার সঙ্গে গাড়ি শিল্প পর্যালোচনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। নির্বাচনের পরদিন তিনি অভিযোগ করেছিলেন, কিছু প্রকল্পকে শিল্প হিসেবে বর্ণনা করা যায় না। কারণ এগুলো কেবল ছদ্মবেশী আমদানিতে সীমাবদ্ধ ছিল।
এরপর আলজেরিয়া সংযোজন কারখানাগুলোর জন্য খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি নিষিদ্ধ করেছিল। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ভক্সওয়াগন অনির্দিষ্টকালের জন্য তাদের উৎপাদন স্থগিত করে এবং ৭০০ কর্মীকে বেকারত্বের দিকে ঠেলে দেয়। এরপর গত বছরের মে মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার কিয়া তার কারখানা বন্ধ করে দিয়ে ১ হাজার ২০০ কর্মীকে চাকরিচ্যুত করে।
আলজেরিয়ার গাড়ি শিল্পের দুর্নীতির কারণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী আহমেদ ওইহিয়া ও আবদেলমালেক সেলাল ও দুই শিল্পমন্ত্রীকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল। এছাড়া হুন্দাই কারখানার মালিক মাহেদিন তাহকাউট ও ভক্সওয়াগন কারখানার মালিক মুরাদ ওলমির মতো করপোরেট হেভিওয়েটদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়।
এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে সরকার গত আগস্টে নতুন নিয়ম চালু করেছিল। যদিও শিল্প বিশেষজ্ঞরা নতুন নিয়মকে অবাস্তব বলে সতর্ক করেছেন। নতুন সরকার বৈশ্বিক গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা করলেও এখন পর্যন্ত কোনো সংস্থাই দেশটিতে গাড়ি উৎপাদনে এগিয়ে আসেনি।